
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৬ মে ২০২৫ | 97 বার পঠিত | প্রিন্ট
কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলো সরকার। তিন মাসের জন্য এ ছাড় দেওয়ায় খুশি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা, তবে ট্যানারি মালিকরা এতে শিল্পের জন্য হুমকি দেখছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে আসন্ন ঈদুল আজহার চামড়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানির সুযোগ থাকলে চাহিদা বাড়বে এবং বিক্রেতারা ভালো দাম পাবেন।
🔹 চামড়া রপ্তানির বন্ধ দুয়ার খুলছে
১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি কার্যত বন্ধ ছিল। যদিও ২০২১ সালে বিশেষ বিবেচনায় মাত্র এক কোটি বর্গফুট চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এবারে তিন মাসের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় দেশজুড়ে চামড়া রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত হলো।
কাঁচা চামড়া থেকে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করে যে চামড়া তৈরি হয়, তাকেই বলা হয় ওয়েট ব্লু। এই চামড়ার বিদেশে বিশেষ চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, স্পেন ও জাপানে।
🔹 ব্যবসায়ীরা বলছেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুর হাসান বলেন, “এটা সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। রপ্তানির সুযোগ থাকলে আড়তে জমে থাকা চামড়া বিক্রি হবে, দামও ভালো পাওয়া যাবে। এমনকি গত বছরের ওয়েট ব্লু চামড়াও এবার রপ্তানি সম্ভব হবে।”
সাবেক সভাপতি আফতাব খান বলেন, “এই সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে বাজার ধরতে পারবেন। তবে কোরবানির সময় খুব কাছাকাছি হওয়ায় নতুন রপ্তানিকারক খুঁজে বের করা এবং বাজার ধরাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
বিভিন্ন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় চামড়া পানির দামে বিক্রি হয়েছে। রপ্তানির সুযোগ না থাকায় সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
🔹 ট্যানারি মালিকদের আপত্তি: শিল্পে হুমকি
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, “ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি শিল্পের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। আমরা এই শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন কাঁচা চামড়া রপ্তানি শুরু হলে স্থানীয় ট্যানারির কাঁচামাল সংকট হবে।”
তিনি বলেন, “ট্যানারিরা যদি ওয়েট ব্লু রপ্তানি করে, তাও ভ্যালু অ্যাডিশন ছাড়া ভালো দাম পাওয়া কঠিন। তাই এত বড় শিল্প গড়ে তুলেই বা লাভ কী? এই কারণেই ১৯৯০ সাল থেকে এ রপ্তানি নিষিদ্ধ ছিল।”
🔹 দামের ইতিহাস ও সরকারের প্রস্তুতি
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর কোরবানির পশুর সংখ্যা হবে প্রায় এক কোটি চার লাখ। সর্বশেষ ২০১৩ সালে চামড়ার দাম ভালো ছিল, তখন গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৮৫–৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু এবছর সরকার নির্ধারণ করেছে ৬০–৬৫ টাকা। যদিও বাস্তবে এই দামও পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
চামড়া নষ্ট হওয়া রোধে সরকার ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
✅ মূল কথা:
চামড়া রপ্তানির এই নতুন সুযোগ একদিকে যেমন বাজারে গতি আনবে ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে এতে ট্যানারি শিল্প নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সরকারকে এখন বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি রপ্তানির কৌশলগত সহায়তা দিতে হবে, যাতে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সাধারণ বিক্রেতারাও লাভবান হন।
Posted ৮:৩৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.