নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | 110 বার পঠিত | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংকে (Islami Bank Bangladesh PLC) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ অনিয়ম প্রকাশিত হয়েছে। মালিকানা পরিবর্তনের পর গত সাত বছরে ব্যাংকে ৮,৩৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অনেকের শিক্ষা সার্টিফিকেটই ভুয়া। এই অবৈধ নিয়োগ ও অনিয়মের কারণে ব্যাংকটির ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়েছে, যা ব্যাংকের পক্ষ থেকেই স্বীকার করা হয়েছে।
ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানা নেওয়ার পর থেকে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সেবার মানে মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার বহু ব্যক্তি, যাদের ব্যাংকিং বা প্রশাসনিক যোগ্যতা নেই, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন। এতে শুধু নিয়োগ নয়, প্রক্রিয়াগত অনিয়মে কয়েকশ কোটি টাকার লেনদেনও হয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংক কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ে একটি বিশেষ পরীক্ষা আয়োজন করলেও সাবেক কর্মকর্তা ও চাকরিচ্যুতরা অংশ না নিয়ে বয়কট করেছেন। ব্যাংক সূত্রের অভিযোগ, এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতেই শুক্রবার ভোরে ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক হয়েছে। হ্যাকাররা হুমকিপূর্ণ বার্তা পোস্ট করে এবং ব্যাংকের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছে।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য সংশয়জনক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ভল্ট ও ক্যাশ কাউন্টারে অতিরিক্ত প্রবেশাধিকার উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। কিছু কর্মকর্তার অযৌক্তিক আচরণ এবং দাবির কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এস আলম গ্রুপের প্রভাবাধীন সময়ে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ, অনিয়ম এবং অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ৭ বছরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিচার ও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, এস আলমের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের কারণে গ্রাহক সেবার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রাহকরা অনাগ্রহ, দুর্ব্যবহার, এমনকি আঞ্চলিক ভাষায় লেনদেনের মতো আচরণে ক্ষুব্ধ। এক চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, “আমি কুড়িগ্রামের শাখায় কাজ করতাম। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত হয়েছি। এখন যারা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তারাই অস্থিরতা তৈরি করছেন। এদের কর্মকাণ্ডের দায় আমরা নেব না।”
বিশ্লেষকরা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সংকট শুধু একটি ব্যাংকের নয়, সারা ব্যাংক খাতের জন্য সতর্কবার্তা। ব্যাংককে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বৃহৎ সংস্কার ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, “এস আলম একাই পুরো ব্যাংকিং সেক্টরকে অস্থির করেছে। ইসলামী ব্যাংককে বাঁচাতে হলে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়সংযম নিশ্চিত করতে হবে।”
ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলাম জানান, “বিদ্রোহী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকাণ্ড ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ভল্ট ও ক্যাশ নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।”
গ্রাহকদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এক গ্রাহক লিখেছেন, “পটিয়ার অবৈধ নিয়োগকৃতরা চাকরি রক্ষায় আন্দোলন করছে, কিন্তু যারা ব্যাংক লুট করেছে—তাদের বিরুদ্ধে কেন কেউ কথা বলে না?”
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হ্যাকিং ও হুমকির ঘটনাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে এবং গ্রাহক নিরাপত্তা ও ব্যাংকিং সেবার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Posted ৯:৫৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.