| বুধবার, ১৬ জুন ২০২১ | 223 বার পঠিত | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিবন্ধন না নিয়ে ক্রেতার নিকট থেকে ভ্যাট আদায় করে বনানী এলাকার একটি অভিজাত পাঁচ মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ভ্যাট আত্মসাৎ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বনানীর টেপটেলস রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে আসছিল। ভুয়া চালানে নির্ধারিত ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগার জমা করেনি। এর মাধ্যমে পাঁচ মাসে আত্মসাৎ করেছে ৩৫ লাখ টাকার ভ্যাট। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের একটি অভিযানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পিওএস মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন চালান দেয়ায় ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন ১৫ জুন সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া চালান ইস্যু করার মাধ্যমে যথারীতি ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দার দল রেস্টেুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করে।
গোয়েন্দাদের তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মইনুল খান বলেন, তদন্ত অনুসারে দেখা যায়, প্রতিটি খাবারের বিলে ‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্লাইড’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং এতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। অথচ এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেনি রেস্টুরেন্টটি।
ভ্যাট আইন অনুসারে, যেকোনো ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরুর পূর্বেই যথাযথভাবে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং নির্ধারিত ৬.৩ ফরমে ক্রেতাদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে। একইসঙ্গে কর মেয়াদ শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে রিটার্নের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিকট থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এই রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ব্যতিরেকে গত পাঁচ মাস ধরে ব্যবসা করে আসছে এবং নিবন্ধন ব্যতিরেকে ক্রেতাদের নিকট থেকে ভ্যাট কর্তন করছে। ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায় করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমাও করছে না।
প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল দুই কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৪৬৫ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ দুই লাখ ৯ হাজার ৭৪৫ টাকা প্রযোজ্য।
মইনুল খান বলেন, খাবারের বিলে ‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্লাইড’ লেখা থাকলেও স্থানীয় ভ্যাট অফিসে এমন আবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের জিএম মো. আনিস জানান যে, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনো কাগজপত্র সংগ্রহ করছে। ভ্যাট নিবন্ধন নেই, কিন্তু ক্রেতাদের নিকট বিলের মাধ্যমে কেন ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
মইনুল খান আরও বলেন, ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায় করা ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বুধবার ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর।
আত্মসাৎকৃত ভ্যাট আদায় ও এ-সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানা আরোপ করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। তদন্তে উদ্ঘাটিত এই অপরাধ সংঘটন নিষ্পত্তির জন্য মামলার প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে।
শেয়ারবাজার২৪
Posted ১১:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ জুন ২০২১
sharebazar24 |
.
.