রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকোচনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | 125 বার পঠিত | প্রিন্ট

সংকোচনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে সংকোচনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে নীতি সুদহার ও বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

অর্থাৎ এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে।

আজ (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বাজারে অর্থের জোগান কমানোর দিকে হাটছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ লক্ষ্যে নীতি সুদহার আবারও বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন।

নতুন মুদ্রানীতিতে, রেপো রেট বা নীতি সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাত দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এবার বিশেষ রেপো সুদহারে (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি-এসএলএফ) নীতি সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে, বর্তমানে তা ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

পাশাপাশি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা রিভার্স রোপো সুদহার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) বিদ্যমান ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ছয় শতাংশ করা হয়েছে।

নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্ন সীমার মধ্যে ব্যবধান ২০০ শতাংশ পয়েন্ট থেকে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ পয়েন্টে নামিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থাৎ নীতি সুদহার ৮ শতাংশের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫০ বেসিস পয়েন্ট যোগ করে এসএলএফ সুদহার ও নিচে ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বিয়োগ করে এসডিএফ সুদহার নির্ধারণ করা হবে।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহয়তার ফলে ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টের ঘাটটি কমে আসবে। ডলার আসা কমে যাওয়া দেশে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত তিন অর্থবছরে অর্থনীতি থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার তুলে নেওয়া হয়েছে।  তারল্য সংকটের কারণে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ধার করছে। পাশাপাশি প্রতি কার্যদিবসে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে।

তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়ে একটি রোড়ম্যাপ করা হয়েছে। এই রোড়ম্যাপের আলোকে সামনের দিনগুলোতে কাজ চলমান থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিহ্নিত খারাপ ব্যাংকগুলো পরবর্তীতে আর খারাপ হয়নি। আর্থিক খাতের সুশাসনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। কাজের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এসময় চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি গ্রুপের হাতে থাকা ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংকের সংকটময় পরিস্থিতি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গভর্নর বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোয় কাঠামোতে সমস্যা ছিলো। সেখানে তারল্য সংকট হয়েছে অন্য কারণে, তাদের সুকুক বন্ড রয়েছে মোট ইসলামী ব্যাংকের দুই শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোও তারল্য সংকট ছিল তবে তাদের বন্ডে বিনিয়োগ থাকায় টাকা তারা পেয়েছে।

আর্থিক খাতের দুর্বলতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করেছিলাম। এটা বলতে পারি দুর্বল ব্যাংকগুলো আরও খারাপের দিকে যায়। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোন ব্যাংক বন্ধ হয়নি, হবেও না। তবে ওই দুর্বল ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।

বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে, যা গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আগামী জুনের মধ্যে তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত ভুগছে ব্যাপক তারল্য সংকটে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সাধারণত বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে টাকার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু আগের মুদ্রানীতি থেকে এরকম মুদ্রা সরবরাহ নীতির বদলে সুদহার ভিত্তিক নীতি নেয়া হয়েছিলো।

অর্থাৎ সুদের হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মুদ্রা সরবরাহের এই নীতি এবারও বহাল রয়েছে

সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে নেওয়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

তবে এই সময়ের মধ্যে অনেক বেশি বাড়েনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়।

কারণ এই পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ সময় লেগে যায়। আগের চেয়ে না বাড়লেও গত নভেম্বর থেকে ক্রমাগত কমছে মূল্যস্ফীতি।

অপরদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ।

প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিলো ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু কোনো মাসেই এই খাতের লক্ষ্য পুরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

এমনকি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের ৫ মাসই প্রবৃদ্ধি ছিলো এক অঙ্কের ঘরে। শুধুমাত্র গত অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছিলো।

এছাড়া দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হারের চাপ এবং সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, নন পারফর্মিং লোন এবং জ্বালানি তেলের দামে অস্থিরতাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে।

তবে এ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা বলা হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভনর কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের ও নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক খোরশেদ আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন।

শেয়ারবাজার২৪

Facebook Comments Box

Posted ৯:৩৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪

sharebazar24 |

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
মো. সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক
মো. মহসিন হোসেন উপদেষ্টা সম্পাদক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

৬০/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

হেল্প লাইনঃ 01742-768172

E-mail: [email protected]