
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | 133 বার পঠিত | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানি সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে, যা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। মূলত সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী ও উদ্যোক্তাদের যোগসাজশে শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে তারা বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কোম্পানি তথ্য গোপন করে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরাও শেয়ারের কৃত্রিম দরবৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে নিজেদের শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন। অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির বোঝা বইছেন।
গোপন তথ্যের আড়ালে শেয়ারদরের অস্বাভাবিক উল্লম্ফন
কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড: মাত্র দুই মাসে শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ। ৮ জুলাই ১৯৯ টাকা থেকে ১ সেপ্টেম্বর ৩৮২ টাকা ৭০ পয়সা হয়েছে। প্রথমে ডিএসইকে জানায় কারণ অজানা, পরে নতুন এলপিজি ইউনিট চালুর কথা জানায়।
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড: ২৯ জুলাই থেকে ৯৭% দরবৃদ্ধি। শেয়ারদর ১৫২ টাকা থেকে বেড়ে ২৯৯ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। প্রথমে ‘কারণ অজানা’ জানালেও পরে নতুন উৎপাদন ইউনিট চালুর ঘোষণা দেয়।
মাগুরা কমপ্লেক্স পিএলসি: মাত্র ১৭ কার্যদিবসে শেয়ারের দাম ৩১% বেড়ে ৮৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা হয়েছে। প্রথমে জানায় কারণ নেই, পরে নতুন মেশিনারিজ কেনার কথা জানায়।
মনোস্পুল বাংলাদেশ পিএলসি: ২৯ জুলাই থেকে ২৫% দরবৃদ্ধি। প্রথমে ‘অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ জানি না’ জানায়, পরে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন যন্ত্রপাতি কেনার ঘোষণা দেয়।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: মাত্র ১৩ কার্যদিবসে ৩২% দরবৃদ্ধি। ২৪ আগস্ট শেয়ারদর ২৭ টাকা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ টাকা ৭০ পয়সা। ডিএসইকে জানায় কারণ অজানা। তবে পরে বিসিআইসি তাদের কাছ থেকে ৫০% ব্যাগ ক্রয়ের চুক্তি নিশ্চিত করে।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমিন বলেন, “কোম্পানি যদি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন করে শেয়ারের দর বাড়ায়, সেটি প্রতারণা। সঠিক জবাবদিহিতা এবং কড়া নজরদারি ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতার ঘাটতির কারণে প্রতারণামূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করা কঠিন হচ্ছে। এক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবস্থান
বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, “ইনসাইডার ট্রেডিং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও জরিমানা করা হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানান, “কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে পারে না। ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সার্ভিলেন্স ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
Posted ১২:২৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.