
নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | 100 বার পঠিত | প্রিন্ট
টানা পাঁচ দিনব্যাপী পতনের পর শেয়ারবাজারে মঙ্গলবার সামান্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেরা বিনিয়োগকারীরা বুধবার (১৫ অক্টোবর) আবারও তীব্র আতঙ্কে পড়েন। বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ‘মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনের’ গুঞ্জন যেন বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করে। ফলাফল—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৮১ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়ে ৫ হাজার ১৬২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে নিম্ন অবস্থান।
দিনের শুরুতে সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষ দিকে বাজারে ব্যাপক ‘প্যানিক সেলিং’ শুরু হয়। প্রথম দেড় ঘণ্টায় সূচক বেড়ে ৫,২০৬ পয়েন্টে পৌঁছালেও বিক্রির চাপে তা দ্রুত লালচিহ্নে চলে যায়। আগের দিন সূচক কমেছিল ৩০ পয়েন্ট, কিন্তু বুধবার লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৬ কোটি টাকায়—যা আগের দিনের তুলনায় ৭৬ কোটি টাকা বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, এই বর্ধিত লেনদেনই বাজারের তীব্র বিক্রির চাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কর্মকর্তারা জানান, বাজারে এখন নীতিগত অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, বিএসইসি যেকোনো দিন নতুন ‘মার্জিন ঋণ বিধিমালা’ কার্যকর করতে পারে। এতে অনেক শেয়ার ঋণ অযোগ্য হয়ে পড়বে। এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন,
“বিধিমালা কার্যকর হলে যেসব শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হবে, সেগুলো বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে। এতে বাজারে বিক্রির চাপ আরও বাড়বে।”
সূত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে—শুধুমাত্র ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার যেগুলোর P/E রেশিও ৩০-এর নিচে এবং ফ্রি-ফ্লোট বাজারমূলধন অন্তত ৫০ কোটি টাকা, কেবল সেগুলোই মার্জিন ঋণের আওতায় থাকবে। অর্থাৎ, ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মার্জিন ঋণ অযোগ্য হবে। এমনকি ‘এ’ ক্যাটেগরির হলেও, পিই রেশিও বেশি বা বাজারমূলধন কম হলে সেটিও অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
এক ব্রোকারেজ সিইও মন্তব্য করেন,
“বাজার এখন নীতিগত ধোঁয়াশায় আছে। বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন না—এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হবে, নাকি নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে।”
অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন,
“বিএসইসির উদ্দেশ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। নতুন নীতিমালা প্রয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে।”
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গুঞ্জনের মূল কারণ হলো স্পষ্ট যোগাযোগের অভাব। তাদের মতে, বিধিমালার সংস্কার বাজারে স্বচ্ছতা আনতে পারে, তবে বিএসইসিকে অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের সামনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে—এই পরিবর্তন কার জন্য, কীভাবে উপকার আনবে, এবং কবে থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত যোগাযোগ, সঠিক তথ্য এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে এই আতঙ্কজনক পতন থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে না।
Posted ১১:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.