শুক্রবার ১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আল-আরাফাহ ব্যাংকে সিন্ডিকেট ঘাঁটি: ১০৯ কোটি টাকা এজেন্ট কমিশন আত্মসাৎ, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জড়িত ধোঁকাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | 138 বার পঠিত | প্রিন্ট

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আল-আরাফাহ ব্যাংকে সিন্ডিকেট ঘাঁটি: ১০৯ কোটি টাকা এজেন্ট কমিশন আত্মসাৎ, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জড়িত ধোঁকাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে (Al-Arafah Islami Bank PLC) ১০৯ কোটি টাকার কমিশন কেলেঙ্কারির ঘটনা। ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্পোরেট আমানতকে তৃণমূল এজেন্ট আমানত হিসেবে দেখিয়ে এজেন্ট কমিশনের নামে বিপুল অঙ্ক আত্মসাৎ করেছেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পরিচালিত এই তদন্তে এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ, ট্রেজারি, আর্থিক প্রশাসন বিভাগ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত একটি জালিয়াতির চিত্র উন্মোচিত হয়। তদন্তে পরিদর্শকরা উল্লেখ করেছেন যে সুসংহত সিন্ডিকেট এবং ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে এই জালিয়াতি প্রায় এক দশক ধরে চলতে পেরেছে, যার ফলে তহবিল অপব্যবহার, আর্থিক ক্ষতি এবং কর ফাঁকির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংকটি আর্থিক প্রশাসন বিভাগের অনুমোদনক্রমে ৩৬১.১১ কোটি টাকা এজেন্ট কমিশন প্রদান করেছিল। তবে তদন্তে দেখা যায়, বেশিরভাগ কমিশন প্রকৃত তৃণমূল আমানতের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়নি। বরং, ব্যাংক কর্মকর্তারা বৃহৎ কর্পোরেট আমানতকে এজেন্ট আমানত হিসেবে দেখিয়ে এই কমিশন তৈরি করেছিলেন। এর ফলে মোট ১০৯.২১ কোটি টাকা কমিশন ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বা যুক্ত আউটলেটগুলিতে গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করেছে যে এজেন্ট ব্যাংকিং মূলত নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের জন্য চালু হয়েছিল, যেখানে লেনদেনের সীমা ১০–১৫ লাখ টাকার মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু আল-আরাফাহ ব্যাংক এজেন্টদের মাধ্যমে উচ্চ সুদের কর্পোরেট আমানত রুট করে এবং অতিরিক্ত কমিশন দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংক এই পেমেন্টের উপর ১০% কর কেটে রেমিট করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৬.১১ কোটি টাকা কর ফাঁকি হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ব্যাংকের তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার ও সহ-উপাধ্যক্ষ আসাদুর রহমান সিভিল এভিয়েশন ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে ২৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এটি মিথ্যাভাবে আটিপাড়া এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে সংগৃহীত দেখানো হয়, যেখানে অতিরিক্ত কমিশন দেওয়া হয়। একইভাবে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার শহিদুল হোসেনের মাধ্যমে কর্পোরেট আমানত রুট করা হয় এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

তদন্তে আরও উঠে আসে যে সাবেক সিনিয়র সহ-উপাধ্যক্ষ শাখাওয়াত হোসেনও ২০২২–২০২৪ সালের মধ্যে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের স্থানান্তর করেছেন। এজেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ২ কোটি টাকা জমা ও উত্তোলন করা হয়েছে, যেখানে সুবিধাভোগী মালিক ছিলেন সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবেদ আহমেদ।

অর্থনৈতিক প্রশাসন স্তরে, সিএফও ও এফএডি প্রধান মোহাম্মদ নাদিম অতিরিক্ত আমানতের হার অনুমোদন করেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিছু ক্ষেত্রে ১১.২৫–১২.৭৫% অনুমোদন করলেও নাদিম নিয়ম লঙ্ঘন করে ১৩% পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছেন। এর পাশাপাশি ১.২৫% ‘কমিশন ভাগাভাগি’ পেমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা ব্যাংক থেকে মোট ২৮৫.২৫ কোটি টাকা অপব্যবহারের অংশ।

পরিদর্শকরা উল্লেখ করেছেন, এফএডি, ট্রেজারি এবং ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার জ্ঞানে এই কেলেঙ্কারি সম্পন্ন হয়েছে। কর্মকর্তারা জেনারেল লেজার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আয় গোপন এবং কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া ফরমান চৌধুরী ও নাদিম ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত প্রণোদনা বোনাসও গ্রহণ করেছেন।

তদন্তে আরও দেখা গেছে যে মূল বিভাগগুলোর কর্মকর্তারা ৫–২০ বছর ধরে একই স্থানে নিযুক্ত ছিলেন, যা সিন্ডিকেট বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।

 

Facebook Comments Box

Posted ৯:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

sharebazar24 |

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
মো. সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

৬০/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

হেল্প লাইনঃ 01742-768172

E-mail: sharebazar024@gmail.com