শুক্রবার ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিমাসে তামাদি হচ্ছে লক্ষাধিক বীমা পলিসি

১৫ মাসে ১৯ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪ | 46 বার পঠিত | প্রিন্ট

১৫ মাসে ১৯ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো

 

বিশেষ প্রতিবেদক: পলিসি বিক্রির সময় গ্রাহককে সঠিক তথ্য না দেয়া, অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বা ভুল তথ্য দিয়ে বীমা পলিসি বিক্রি, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বীমা পলিসি বিক্রি না করা, বীমা চালু রাখার সুফল সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতনতার অভাব, এজেন্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ঘাটতি, এজেন্ট কর্তৃক গ্রাহকের প্রিমিয়ামের অর্থ আত্মসাত, গ্রাহকদের সামর্থ্যের তুলনায় উচ্চ মূল্যের বীমা পলিসি বিক্রি, কতিপয় কোম্পানি যথা সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ না করায় গ্রাহকদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরিসহ নানা কারণে বছরে লাখ লাখ গ্রাহক হারাচ্ছে দেশের জীবন বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। ফলে একদিকে গ্রাহকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বীমা সম্পর্কে সৃষ্টি হচ্ছে নেতিবাচক ধারণা।

অপরদিকে পলিসি তামাদির উচ্চহারের কারণে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সংকুচিত হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বলছে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে দেশের জীবন বীমা খাতের ৩৫টি কোম্পানির তিন লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ টি বীমা পলিসি ল্যাপস বা তামাদি হয়েছে। ২০২৩ সালে তামাদি হয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ টি বীমা পলিসি।

সব মিলিয়ে গত ১৫ মাসে ১৯ লাখ সাত হাজার ৪৩৮ জন গ্রাহক হারিয়েছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। সে হিসেবে গড়ে প্রতি মাসে বীমা কোম্পানিগুলোর এক লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি গ্রাহক ঝরে পড়ছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয়েছে সোনালী লাইফের, ৬৭ হাজার ৫৫৫টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ, কোম্পানিটির ৫৭ হাজার ৯৮১টি বীমা পলিসি তামাদি হয়েছে।

এছাড়াও ন্যাশনাল লাইফের ৩১ হাজার ৬৬৭টি পলিসি তামাদি হয়েছে এ বছরের শুরুতে। এর আগে ২০২৩ সালেও সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয় সোনালী লাইফের, তিন লাখ ৯৬ হাজার ৫২২টি। ডেল্টা লাইফের দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৯টি পলিসি তামাদি হয়। এ ছাড়াও পপুলার লাইফের এক লাখ ৬৫ হাজার ৭১২টি এবং ন্যাশনাল লাইফের এক লাখ ৫১ হাজার ৪০৫টি পলিসি তামাদি হয় ২০২৩ সালে।

তামাদি পলিসির সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য জীবন বীমা কাম্পানিগুলোকে বছরের পর বছর তাগিদ দিয়ে আসছে খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। একইসঙ্গে পলিসি তামাদি ঠেকাতে জারি করা হচ্ছে নতুন নতুন নির্দেশনা।

বীমা কোম্পানিগুলো বলছে- নিড বেজড সেলতথা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বীমা পলিসি বিক্রি না করা, এজেন্ট কর্তৃক বীমা গ্রাহককে অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বা ভুল তথ্য প্রদান, বীমা চালু রাখার সুফল সম্পর্কে গ্রাহকের অজ্ঞতা, এজেন্টদের যোগ্যতার অভাব ও বীমা কোম্পানি পরিবর্তন এবং গ্রাহকের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে বীমা পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে।

কতিপয় কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ না করে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি, প্রিমিয়ামের কিস্তি প্রদানে গ্রাহকের অনিহা, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে কমিশন হার কমে যাওয়ায় গ্রাহকের নিকট এজেন্টদের না যাওয়া, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং প্রবাসী গ্রাহকদের প্রিমিয়াম যথাসময়ে জমা না করার কারণে পলিসি তামাদি হচ্ছে বলেও দাবি বীমা কোম্পনিগুলোর।
এ ছাড়াও প্রিমিয়াম জমার পদ্ধতি যদি সহজ না হলেও পলিসি তামাদি হতে পারে।

আবার কমিশন অ্যাডজাস্টমেন্ট করলে মিস সেলিং এর সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে প্রকৃত এজেন্ট তৈরি হয় না এবং পলিসি তামাদি হয়। এজেন্টের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার জ্ঞান না থাকলে বা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না দেয়া হলে তার দ্বারা বিক্রিত পলিসি তামাদি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তামাদি পলিসির সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র পাঠানো চিঠির জবাবে এমন তথ্য দিয়েছে বেসরকারি খাতের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো।
দেশের বীমা শিল্পে তামাদি পলিসির সংখ্যা কমিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-জীবন বীমা কোম্পানির প্রথম বর্ষ ও ডেফার্ড প্রিমিয়ামের ওপর প্রদেয় কমিশনের ১০ শতাংশ দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম সংগৃহীত হওয়ার পর প্রদেয় নবায়ন কমিশনের সাথে এজেন্ট এবং সকল স্তরের উন্নয়ন কর্মকর্তাগণকে পরিশোধ করতে হবে।

বিলম্বিত কমিশনের ওপর পূর্ববর্তী বছরের বিনিয়োগ আয়ের হার অথবা বাৎসরিক ৩ শতাংশ সরল সুদ এই দু’টির মধ্যে যেটি কম সে হারে মুনাফা প্রদান করে বিলম্বিত কমিশন বিল তৈরী করতে হবে।

কমিশনসহ অন্য যেকোন রকম ব্যয় যেমন- বোনাস, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি সংগৃহীত প্রিমিয়ামের সাথে সমন্বয় করা যাবে না। এজেন্ট এবং সকল উন্নয়ন কর্মকর্তাকে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে কমিশন পরিশোধ করতে হবে।

এ ছাড়াও লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে বিগত ৫ বছরের কম সময় ধরে যে সকল পলিসি তামাদি হয়ে আছে সেগুলোর কোন বিলম্ব ফি ছাড়াই পুনর্বহালের সুযোগ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন কর্তৃক ‘মুজিব বর্ষে বীমা কোম্পানির উপহার’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
শেয়ারবাজার২৪

 

Facebook Comments Box

Posted ১২:৫২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

sharebazar24 |

আরও

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
মো. সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক
মো. মহসিন হোসেন উপদেষ্টা সম্পাদক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

৬০/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

হেল্প লাইনঃ 01742-768172

E-mail: [email protected]