
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ | 68 বার পঠিত | প্রিন্ট
দেশের শেয়ারবাজারে ফের ধস দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে। কিন্তু আশার বদলে বাস্তবে ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারেই সূচক বড় পতনের মাধ্যমে লেনদেন শেষ করে।
রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
এই বৈঠককে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, বাজারে তারল্য বাড়ানো এবং আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর আর্থিক বা নীতিগত সিদ্ধান্ত আসবে। এরই প্রেক্ষিতে বৈঠকের আগের কর্মদিবস (বৃহস্পতিবার) ডিএসই সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়েছিল।
কিন্তু বৈঠকে বাস্তবায়নযোগ্য কোনো প্রণোদনা বা সিদ্ধান্তের ঘোষণা না আসায় সেই আশাবাদ দ্রুত হতাশায় রূপ নেয়। বরং বৈঠকে পূর্বের আদর্শগত বক্তব্যগুলোরই পুনরাবৃত্তি হয়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চরম আঘাত হানে।
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৮৭৪.৫৮ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১২.১৯ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১,০৬৩.৩৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৬.৭৬ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১,৭৯৮.৩৭ পয়েন্ট।
এইদিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় কম (৩৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকা)। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৩০৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও একই চিত্র। সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১টি কোম্পানির মধ্যে ৫৫টির দর বেড়েছে, ১১৩টির কমেছে এবং ৩৩টির দর ছিল অপরিবর্তিত। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬.৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৬৮৬ পয়েন্টে।
মতিঝিলের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মধ্যম বিনিয়োগকারীরা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এক বিনিয়োগকারী বলেন, “বৈঠক হলো, বক্তৃতা হলো, কিন্তু কাজে কী এলো? আমাদের পুঁজি তো দিন দিন গলছে।”
আরেকজন মধ্যবয়সী বিনিয়োগকারী বলেন, “বাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা ছিল মরীচিকা।”
আবদুর রহমান নামে এক তরুণ বিনিয়োগকারী বলেন, “রাশেদ মাকসুদ শেয়ারবাজারটাকে শেষ করে দিয়েছেন। অর্থ উপদেষ্টা কেন তাঁকে ধরে রেখেছেন, তা বোধগম্য নয়।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার বর্তমানে একধরনের দিকহীনতা ও আস্থাহীনতায় রয়েছে। উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না আসায় বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন। কেউ নতুন বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না, আবার অনেকে পুরোনো শেয়ার নিয়েও সংকটে রয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। আস্থার সংকট কাটাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবধর্মী নীতিগত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন তারা।
Posted ৫:০০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.