
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | 75 বার পঠিত | প্রিন্ট
শেয়ারবাজারে গত ১৫ বছরে সংঘটিত ‘অনিয়ম’ খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে কমিটির দু’জন সদস্যের শেয়ারবাজারের মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে চলছে নানামুখী আলোচনা।
শেয়ারবাজারে গত ১৫ বছরে সংঘটিত ‘অনিয়ম’ তদন্তে গঠিত কমিটি নিয়ে তোপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে স্টেকহোল্ডারদের তোপের মুখে পড়ে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বিএসইসি চেয়ারম্যান স্বার্থের সংঘাত সংক্রান্ত অভিযোগ খন্ডানোর মতো সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে না পেরে নানাভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে কমিটির চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদ ও অন্যতম সদস্য ইয়াওয়ার সায়িদ জোরালোভাবে দাবি করেন, তারা মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তদন্তে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তারা নির্মোহভাবে তাদের তদন্ত কাজ পরিচালনা করবেন এবং একটি বস্তুনিষ্ট রিপোর্ট কমিশনের কাছে জমা দিতে সক্ষম হবেন।
এর আগে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির জরুরি কমিশন সভায় যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের কর্ণধার ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মোঃ শফিকুর রহমান, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোঃ জিশান হায়দার এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম।
কমিটিকে ১২টি ইস্যু সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইসতিনা, আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বসুন্ধরা গ্রুপের কোম্পানি এবিজি লিমিটেডকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী মনোনীত করা; বেস্ট হোল্ডিংস, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, একমি পেস্টিসাইডস ও রিং শাইন টেক্সটাইলের আইপিও, ফরচুন সুজের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট, আইপিও ও শেয়ার মূল্যের কারসাজি, আল আমিন কেমিক্যাল, কোয়েস্ট বিডি (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স) ও এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার ইস্যু সংক্রান্ত অনিয়ম।
শেয়ারবাজারে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে কমিটি গঠনকে বাজার সংশ্লিষ্টরা স্বাগত জানালেও কমিটির দু’জন সদস্যের বিষয়ে তারা আপত্তি তুলেছেন। তারা হচ্ছেন- কমিটির চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদ ও সদস্য ইয়াওয়ার সায়িদ। জিয়া ইউ আহমেদ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান। আর ই্য়াওয়ার সায়িদ হচ্ছেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা এইমস অব বাংলাদেশ এর কর্ণধার।
সাংবাদিকরা বলেন, জিয়া ইউ আহমেদ ও সদস্য ইয়াওয়ার সায়িদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। কিন্তু তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই একাধিক মিউচুয়াল ফান্ড স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। আবার বাজারেও এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের আশংকা আছে। নানা অনিয়মের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো অসাধু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তারা তা প্রকাশ করার সাহস দেখাতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ উঠবে। এসব কারণে কমিটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
এ সময় একজন সাংবাদিক উদাহরণ হিসেবে একটি বিষয় তুলে ধরে বলেন, কয়েক বছর আগে একটি এএমসির (এলআর গ্লোবাল) দুটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিল জিয়া ইউ আহমেদের কোম্পানি ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। মেয়াদি ফান্ড দুটির অবসায়ন সংক্রান্ত জটিলতা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এতে ভিআইপিবি একটি পক্ষ ছিল। বিএসইসি কোয়েস্ট বিডি নামে যে কোম্পানির অনিয়ম তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে কমিটিকে, সেই কোয়েস্ট বিডি মূলত এলআর গ্লোবাল অধিগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় কোয়েস্ট বিডিকেন্দ্রীক অনিয়মে এলআর গ্লোবালের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তারা অভিযোগ করতে পারে, জিয়া ইউ আহমেদ পুরনো শোধ নেওয়ার জন্য তাদেরকে দোষী দেখাচ্ছেন।
অন্যদিকে ফরচুন সুজে এইমসের দুটি ফান্ডের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ছিল। ওই বিনিয়োগ থেকে তারা বিপুল মুনাফা করেছে। এই কোম্পানিটির মূল্য কারসাজি খতিয়ে দেখার কথাও বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। এইমস নিজেরাই যখন এমন বিনিয়োগ থেকে লাভবান, সেখানে ইয়াওয়ার সায়িদ যতই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে কাজ করুন না কেন, মানুষের মনে কিন্তু নানা প্রশ্ন উঠবেই।
এছাড়া এইমসের ফান্ড বেক্সিমকোর সুকুকেও বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই সুকুক ইস্যুতেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে আভিযোগ আছে, যা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। যে সিকিউরিটিজকে (সুকুক) বিনিয়োগ অনুকূল মনে করে বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেটির অনিয়ম খুঁজতে যাওয়ার বিষয়টিও বেশ খাপছাড়া মনে হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এসব প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টিকে এভাবে সরলীকরণ করা ঠিক নয়। কমিটিতে বেশ কয়েকজন সদস্য আছেন। তাই কোনো বিষয়ে কারো রিজার্ভেশন থাকলে, তিনি সেটি এড়িয়ে যাবেন।
এদিকে স্বার্থের সংঘাত সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সায়িদ বলেন, গত ৪০ বছরে শেয়ারবাজারের সকল ক্ষেত্রে কাজ করার আভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তাই এমন একটি তদন্ত কাজ করার যোগ্যতা আছে। কোথায় তার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা আছে, তা না দেখে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে ও নিরপেক্ষভাবে তদন্তের কাজটি করতে পারছেন কি না, সেটি দেখা উচিত।
শেয়ারবাজার২৪
Posted ১:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
sharebazar24 | sbazaradmin
.
.