মঙ্গলবার ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের দাবি

এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারেও কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | 69 বার পঠিত | প্রিন্ট

এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারেও কমিশন

এবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)সংস্কারেও কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বৈঠক শেষে এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) কাছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন সম্পর্কিত কর্ম পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন গভর্নর।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে করণীয় নির্ধারণ করতে আয়োজিত বৈঠকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা, ঋণ ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ও দায়-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেনে তুলতে পরামর্শও চাওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, সম্প্রতি কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তারল্য সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পর্ষদ পুনর্গঠন ও সংস্কারের আওতায় নিতেও দাবি জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হাত দিতে চায় না। ব্যাংক খাত সংস্কার শেষে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত কয়েকটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ঋণ ফেরত পাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয়েছে মূলধন সংকট।

এ বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. হুসনে আরা শিখা বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো নিয়ে তারা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে তারা ব্যাংকের মত সুযোগ সুবিধা চায়।

“খেলাপি ঋণ টানা দুই বছরে আদায় করতে না পারলে ব্যাংক তা অবলোপন বা রাইট-অফ করতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দুই বছরে অবলোপন করার সুবিধা চায়।”

আবার প্রভিশনের একটি অংশ মুনাফায় দেখাতে চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধেও সময় বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। তবে গভর্নর পুরো খাত সংস্কারে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে বলেন এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এ খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন যে খেলাপি ঋণ আছে এবং যে তারল্য সংকট, সেটার সমাধানে গভর্নর একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।”

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া জানান, বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে বেশি শুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও গভর্নরের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

নন-পারফর্মিং লোন ( এনপিএল ) আদায় যেন সহজ হয়, সে বিষয়টিও গভর্নরের কাছে উল্লেখ করেছেন বলেন জানান গোলাম সারওয়ার। বলেন, এটা বাস্তবায়ন হলে তাদের তারল্য সঙ্কট কেটে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড ২৩ হাজার ২০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। এ খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিতরণ করা ঋণের ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

এই দুর্দশার মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন– এই তিন মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সাড়ে ৪৮ হাজারের বেশি ব্যক্তি আমানতকারী।

তবে একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর সংখ্যা এক হাজারের মত বেড়েছে। তাতে সব মিলিয়ে তিন মাসে আমানতকারীর কমেছে সাড়ে ৪৭ হাজারের মত। আর এক বছরে আমানতকারী কমার সংখ্যা ৮৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত।

এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ কোম্পানির তারল্য সংকট রয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তাই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাবকে দায়ী করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

Facebook Comments Box

Posted ১০:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

sharebazar24 |

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
মো. সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

৬০/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

হেল্প লাইনঃ 01742-768172

E-mail: sharebazar024@gmail.com